কথাকম বলা মানুষ মিটমিটি শয়তান !
"আমাদের বর্তমান সমাজে মানুষে বলে যে কথাকম বললে মিটমিটি শয়তান!
আর আমাদের এই সমাজে কথা কম বলা লোককে একদম খারাপ নজরে দেখা হয়, তারা জানেনা সেটা সুন্নাহর সঙ্গে বেয়াদবী করা হচ্ছে।
আমাদের দেখা একটি বাস্তবতা হচ্ছে, যখন কেউ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বেশি বেশি কথা বলে, তখন সে যে কেবল অনর্থক কথাই বলে বেড়ায় এমন নয়। বরং সে জড়িয়ে পড়ে অনেক ধরনের অন্যায়-অপরাধের সঙ্গেও। যারা বেশি কথা বলে তারা মানুষের গিবত-পরনিন্দায় লিপ্ত হয় বেশি। অবচেতনভাবেই হয়তো তারা অনেকের গিবত করতে থাকে এবং এ গিবত-পরনিন্দার কারণে অনেক সময় কারো সম্মানহানি হয়। কখনও আবার দুই ব্যক্তির মাঝে সম্পর্ক নষ্টও হয়। এ কাজটি সামাজিকভাবে চরম নিন্দিত ও শরিয়তের দৃষ্টিতে এক জঘন্য অন্যায়।
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন একে অন্যের গিবত না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?’ –সূরা হুজুরাত: ১২
যারা বেশি কথা বলে, কখনও মিথ্যা-অশ্লীলতার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে তারা। অনেক ক্ষেত্রেই অসংলগ্ন ও অসতর্ক কথায় তারা লিপ্ত হয়। ফলে ঝগড়া-বিবাদও সৃষ্টি হয় কখনও কখনও। পরিণতিতে বিঘ্নিত হয় সামাজিক শান্তি-শৃংখলা ও সম্প্রীতি।
কিন্তু যদি তারা কথাবার্তায় সংযত হতো, অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকত- তাহলে এ ধরনের মারাত্মক গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা তাদের জন্যে অনেক সহজ হতো।
তাহলে আসুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন আমরা জেনে নেই। চুপ থাকার ফজিলত কি?
‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির নীরব থাকায় যে মর্যাদা লাভ হয়, তা ষাট বছরের নফল ‘ইবাদাতের চেয়েও উত্তম।
[মিসকাত।৪৮৬৫-[৫৪]]
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার অতিথির অভ্যর্থনা ও আদর-যত্ন করে। আর যে লোক আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা নীরব থাকে।
[জামে আত-তিরমিজি ২৫০০]
কথা কম বলা লোককে যারা অহংকারী মনে করে তারা হয়ত জানেনা 'কথা কম বলা' একপ্রকার ইবাদত, সুন্নত।"
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক নীরব থাকলো, সে নাজাত (মুক্তি) পেলো।
(জামে আত -তিরমিজি ২৫০১)
সত্যিকারের মুমিনের পরিচয় হলো, সে কথা কম বলবে ও কম হাসবে। বেশি বেশি আমল করবে ও কাঁদবে আল্লাহর দরবারে। বেশি কথা বলা, অপ্রয়োজনীয়-অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করা, নিরর্থক হাসি মানুষের ব্যক্তিত্বকে খাটো করে দেয়।
কম কথা বলা বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের পরিচায়ক। যে কথা কম বলে, সে অনেক ধরনের অনর্থক বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। গিবত-পরনিন্দা-মিথ্যা-অশ্লীল কথাবার্তা ইত্যাদি নানা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকাও তার পক্ষে সম্ভব হয়। এ জন্যেই তো যারা কথা কম বলে হাদিস শরিফে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো বান্দাকে দুনিয়াবিমুখ ও স্বল্পভাষী দেখবে তখন তার সঙ্গে উঠাবসা করো। কেননা সে হেকমতপ্রাপ্ত।
-বায়হাকি
আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Comments
Post a Comment